শীতে পোষা প্রাণীর যত্নে করণীয় সম্পর্কে জানুন
প্রিয় পাঠক,ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব কেবল মানুষের উপর নয় প্রানীকূলের উপরেও পড়ে। শীতের ঠান্ডা হাওয়া, কমআর্দ্রতা এবং শুষ্কতা পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই শীতে পোষাপ্রানীর বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন। সামান্য যত্নের অভাবে আপনার সখের প্রানীটি অসুখে ভুগতে পারে এমনকি মারাও যেতে পারে। পোষা প্রাণীকে উষ্ণ রাখা, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখা এবং সঠিক পুষ্টিরব্যবস্থা করা—এসবই শীতের সময় পোষা প্রাণীদের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এখানে শীতে পোষা প্রাণীর যত্নে করনীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো যা প্রতিটি পোষাপ্রাণীর মালিকের জানা প্রয়োজন। চলুন তাহলে শুরু করি
পোস্ট সূচীপত্র:শীতে পোষা প্রাণীর যত্নে করণীয় সম্পর্কের নিচে পড়ুন
আশ্রয় ও উষ্ণতা বজায় রাখা
শীতকালে পোষা প্রাণীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে সঠিক আশ্রয় এবং উষ্ণতা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে যেসব পোষা প্রাণীকে ঘরের বাইরে রাখা হয়, তাদের জন্য এমন একটি উষ্ণ এবং সুরক্ষিত একটি আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, যা শীতের ঠাণ্ডা বাতাস থেকে তাদের রক্ষা করবে।
থাকার ঘরটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যেন সেখানে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকতে না পারে এবং ঘরের ভেতর পর্যাপ্ত তাপ বজায় থাকে।তবে যদি সম্ভব হয়, তাদের ঘরের ভেতরে রাখাই ভালো, কারণ ঘরের তাপমাত্রা বাইরের তুলনায় বেশি থাকে এবং বাইরে থাকার চেয়ে এটি অনেক আরামদায়ক। বিছানার জন্য উষ্ণ কম্বল বা বিশেষ পশমের আসন ব্যবহার করা যেতে পারে।
যা তাদের শীতের হাত থেকে রক্ষা করবে। এছাড়া, ঘরের ভেতরে এমন স্থানে তাদের রাখা উচিত যেখানে সরাসরি শীতল বাতাস প্রবেশ করে না। শীতকালে পোষা প্রাণীদের ত্বকের যত্ন এবং সুরক্ষার জন্য বিশেষ পেট কেয়ার প্রোডাক্টস ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ত্বককে আর্দ্র রাখবে এবং শীতকালীন শুষ্কতা থেকে তাদের রক্ষা করবে।
খাদ্য ও পুষ্টি
এই আবহাওয়ায় ঘরে পোষা প্রানীদের খাবারের প্রতি আগ্রহ অনেকটায় কমে যায়। কিন্তু শীতে শরীর উষ্ণ রাখার জন্য তাদের শক্তির প্রয়োজন পড়ে। তাই এই সময় তাদের খাদ্যে রুচি ফেরাতে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে খাদ্য তালিকায় বিশেষ নজর দেয়া জরুরী। এ সময় প্রতিদিনের খাবারের সাথে এক বা দুই চামচ টক দই দেয়া যেতে পারে। সাথে এমন সব খাবার রাখতে হবে যেগুলোতে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন এবং ফ্যাট রয়েছে যাতে তাদের শরীরকে উষ্ণ রাখতে পারে।
এই আর্টিকেলটি লিখেছেন arogga.com
এছাড়াও বিভিন্ন রকমের পুষ্টিকর সবজি যেমন পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, গাজর সিদ্ধ করেও খাওয়ানো যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার তাদের খাওয়ানো যাবে না। কেননা এতে তাদের ওজন বেশি হয়ে যেতে পারে যা পরবর্তীতে নানারকম স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারন হতে পারে। আপনার সখের প্রাণীটির সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য শুকনো, প্যাকেট বা টিনজাত রেডি খাবার দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
এই খাবারগুলো প্রাণীটির পুষ্টির চাহিদা কতটুকু পূরন করবে তা বলা যায় না কিন্তু ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে অনেক বেশি। ঠান্ডার কারনে অনেক প্রাণীই শীতকালে পানি পান করতে চায় না। শীতে তাদের তৃষ্ণাও কিছুটা কম হয়। কিন্তু শীতেও তাদের হাইড্রেটেড রাখা খুব জরুরী তাই তাদের পর্যাপ্ত পানি পান করানোর চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের কুসুম গরম পানি পানের জন্য দেয়া যেতে পারে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় ভেটেনারি হাসপাতালের সাবেক চিকিৎসক লুতফুর রহমান বলেন প্রাণীর ওজনের উপর পানির পরিমান নির্ভর করে। একটি বিড়াল ৪০০ মিলি থেকে ১ লিটার পর্যন্ত পানি পান করতে পারে অপরদিকে একটি কুকুর কমপক্ষে ৭০০ মিলি পান করে থাকে। তিনি আরো বলেন যে, পোষা প্রাণীকে বিশুদ্ধ পানি দিতে হবে এবং শুধু পানি পান না করতে চাইলে মাছ অথবা মাংশ সিদ্ধ পানি দেয়া যেতে পারে।
স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও রোগ প্রতিরোধ
আপনার পোষ্যটি যেন শীতে অসুস্থ না হয়ে পড়ে যে জন্য বিশেষভাবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। শীতে ঠান্ডা মেঝেতে হাটা চলার কারনে প্রাণীদের জয়েন্টে ব্যাথা হতে পারে তাই তাদের জন্য হিটিং প্যাড ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাণীদের শরীরে লোম আছে তার মানে এই নয় যে তাদের ঠান্ডা লাগে না। তাই শীত নিবারনের জন্য যথাযথ পোশাক না দিলে হাইপোথার্মিয়া হওয়ার আশংকা থাকে। এই সময় প্রাণীর ত্বক খসখসে ও শুকনো হয়ে যেতে পারে।
বাইরের ঠান্ডা শুষ্ক বাতাসের কারনে ত্বকের আদ্রতা কমে গিয়ে ত্বক ফেটে যেতে পারে। এমনকি লোমও অধিক পরিমানে খসে পড়তে পারে। ত্বকে যাতে রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে হতে পারে এবং আদ্রতা বজায় থাকতে পারে এই জন্য ভালো লোম আঁচড়ে দিতে হবে। এছাড়াও তাদের ঘন ঘন গোসল দেয়া ঠিক নয় এবং অনেক বেশি শ্যাম্পু ব্যবহার করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
শীতে আপনার প্রিয় প্রাণীটিকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে, এবং ভেটেনারি চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। এছাড়াও নিয়মিত এদের থাবা পরিষ্কার করতে হবে এবং শুষ্কতার জন্য যাতে ফেটে না যায় সে জন্য নিয়মিত নারিকেল তেল মালিশ করতে হবে।
ব্যায়াম ও খেলাধুলা
বাইরে শীতল আবহাওয়ার জন্য পোষা প্রাণীদের সাধারণত বাইরে কম বের করা হয়। এর ফলে তাদের শারীরিক সক্রিয়তা অনেকটা কমে যায়। খোলা বাতাসে দীর্ঘ সময় হাঁটা, মাঠে খেলাধুলা করা ইত্যাদি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনে আপনার পোষ্যর ওজন বৃদ্ধি পেয়ে যেতে পারে যা পরবর্তীতে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারন হতে পারে। তাই, শীতকালে তাদের ঘরের ভেতরেই ব্যায়াম এবং খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিভিন্ন ধরণের খেলনা এবং ইনডোর গেমের মাধ্যমে তাদের ব্যায়াম করানো যেতে পারে। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, তবে বাইরে কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ দিতে হবে, যাতে তারা তাজা বাতাস পেতে পারে। তবে এ সময়ে তাদের সঠিকভাবে গরম পোশাক পরানো এবং ঠাণ্ডা থেকে সুরক্ষা দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে তাকে সোয়েটার পরিয়ে বাইরে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
পোষাক ও অ্যাকসেসরিজ
শীতকালে পোষা প্রাণীদের জন্য সঠিক পোশাক এবং সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা জরুরী যাতে তারা গরম থাকতে পারে। কিছু পোষা প্রাণী প্রাকৃতিকভাবে লোমযুক্ত হয়, কিন্তু যারা লোমহীন বা পাতলা লোমওয়ালা, তাদের জন্য শীতকালে বিশেষ পোশাক দরকার। উষ্ণ জামা, জ্যাকেট এবং সুতির মোজা তাদের শীত থেকে রক্ষা করে। বাজারে পোষা প্রাণীদের জন্য গরম সোয়েটার, কম্বল, মোটা প্যাড ইত্যাদি কিনতে পাওয়া যায়। আপনার বাজেটের মধ্যে সেগুলোও সংগ্রহ করে নিতে পারেন।
শেষ কথা:arogga.com
শীতে পোষা প্রাণীর যত্নে করনীয় বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল। যে কোন পরিস্থিতিতে পোষা প্রাণীদের সুরক্ষিত রাখা মালিকদের জন্য একটি দায়িত্বপূর্ণ কাজ। তাই তাদের সঠিক আশ্রয়, পুষ্টিকর খাদ্য, ত্বকের পরিচর্যা, ব্যায়াম, এবং প্রয়োজনীয় পোশাক প্রদান করে শীতকালটাও তাদের জন্য আরামদায়ক ও নিরাপদ করে তুলতে পারেন।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নজর রাখা শীতকালের চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে।
এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন: arogga.com
ফাইসাল ২৪ ওয়েবসাইটটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url